বরখাস্ত হওয়া পুলিশ সদস্যরা হলেন: সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনর্চাজ (এসআই) নাহিদুর রহমান ভুইয়া, আসামিদের আদালতে নেয়ার দায়িত্বরত পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফ হাসান ও কনস্টেবল আব্দুস সাত্তার।
এছাড়া দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় হওয়া মামলা কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি)-এ হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান ডিবি প্রধান।
হারুন অর রশিদ বলেন, সেনাবাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত শীর্ষ জঙ্গি নেতা জিয়াউল হক ওরফে মেজর জিয়ার নির্দেশ ও পরিকল্পনায় ঘটে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনা।
ডিবি প্রধান আরও বলেন, জঙ্গিদের আদালত চত্বর থেকে ছিনিয়ে নেয়া হবে এটা তারা (জঙ্গিরা) আগেই জানতো। পরিকল্পনাকারীরা সবাই নজরদারিতে আছেন বলে জানান তিনি।
শিগগিরই তাদের গ্রেফতার করা হবে উল্লেখ করে হারুন অর রশিদ বলেন, আদালত থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের মিশনে অংশ নেয় ১৮ জঙ্গি। তাদের ৬ জন সরাসরি ও বাকি ১০ থেকে ১২ জন আদালত এলাকায় রেকি করেছিল।
তিনি আরও বলেন, আদালত প্রাঙ্গণে ছিনতাইয়ের নেতৃত্ব দেয় আইমান ও সাব্বিরুল হক চৌধুরী নামে দুই জঙ্গি।
উল্লেখ্য, রোববার (২০ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকার আদালত থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য।
ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গি হলেন: জাগৃতি প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী ফয়সল আরেফিন দীপন এবং লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান ও আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এদিন বেলা ১২টার দিকে মোহাম্মদপুর থানার এক মামলায় হ্যান্ডকাপ দিয়ে চার আসামিকে আদালতে হাজিরা শেষে হাজতখানায় নেয়া হচ্ছিল। এ সময় তাদের নিয়ে যাচ্ছিলেন একজন পুলিশ এবং একজন আনসার সদস্য। তারা গেটের সামনে আসার পরপরই ওই ৪ আসামি পুলিশ ও আনসার সদস্যকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করে। এ সময় বাইরে আরও চারজন লোক ছিল বাইক নিয়ে। ঘুষি দেয়ায় পুলিশ সদস্য আহত হন এবং তার শরীর থেকে রক্ত বের হয়। যার ফলে তার হাতে থাকা দুই আসামি তার হাতছাড়া হয়ে যায়। তবে আনসার সদস্য তার হাতে থাকা দুই আসামিকে ছাড়েননি। তাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। তাকেও ঘুষি দেয়া হয়েছে, স্প্রে মারা হয়েছে। কিন্তু তিনি আসামি ছাড়েননি। কিল-ঘুষি খেয়ে পুলিশ সদস্য যে দুই আসামিকে ছেড়ে দিয়েছেন তারা বাইরে রাখা মোটরসাইকেলে উঠে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে মোটরসাইকেলে থাকা লোকেরা সিগন্যাল দেয়ার পরই গেটের কাছে এসে আসামিরা পুলিশকে কিলঘুষি দেয়া শুরু করে। এর মধ্যে গেটের দারোয়ান ধরতে এলে তাকেও স্প্রে মারা হয়; তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। পার্কিংয়ে আরও ৩ জন ড্রাইভার ছিলেন, তাদেরও স্প্রে মেরে অজ্ঞান করা হয়। পথচারী ছিলেন অনেক; তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজনকে স্প্রে মারার পর বাকি পথচারীরা সরে যান। পরে লোকজন এগিয়ে গেলে তারা একটি মোটরসাইকেল আদালতের পূর্ব পাশের জেলা পরিষদ ভবনের পাশের রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায়। পরে মোটরসাইকেলটি জব্দ করে পুলিশ।