টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় ৬ আসামির ৩ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এছাড়া গ্রেপ্তার আরো ৪ জন ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দী দেবে বলে জানা গেছে।
পুলিশ জানায়, টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে যাত্রীদের জিম্মি করে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ১০ জনকে আদালতে তোলা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড চাইলে ৬ জনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত।
এর আগে ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের চলন্ত বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনকে সোমবার রাত আটটার দিকে টাঙ্গাইল পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র্যাব। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদেরকে আজ বিকেলে আদালতে তোলা হয়।
এর আগে সোমবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল-মঈন জানান, ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রোববার গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে অভিযান পরিচালনা করে সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী মো. রতন হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, মো. সোহাগ মন্ডল, খন্দকার মো. হাসমত আলী ওরফে দীপু, মো. বাবু হোসেনওরফে জুলহাস, মো. জীবন, মো. আব্দুল মান্নান, মো. নাঈম সরকার, রাসেল তালুকদার, মো. আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ।
আল-মঈন জানান, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রতনের নেতৃত্বে গত ২ আগস্ট দুপুরে গাজীপুরের জিরানী বাজার এলাকায় সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী বাসে ডাকাতির পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে। মূল পরিকল্পনাকারী রতন ডাকাতির কাজে প্রস্তুতির আর্থিক খরচ বহন করে। চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, রতন ডাকাত ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত ৪টি চাকু, ২টি ধারালো কাঁচি ও ১টি ক্ষুর সংগ্রহ কর বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব আরো জানায়, রাত আনুমানিক ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাস সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌঁছলে ডাকাত রাজা যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহন বাসটিতে উঠে। পরবর্তীতে আরো দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসটিতে যাত্রীবেশে ওঠে।
বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু এলাকা অতিক্রম করলে রতন ডাকাত সদস্যদের চাকু ও কাঁচি সরবারহ করেন। আউয়াল বাসের গেটের কাছে যায় এবং অন্যান্যদের ইশারা দিলে রাজা, রতন, মান্নান ও নূরনবী ড্রাইভিং সিটের কাছে গিয়ে ড্রাইভারকে মারধর করে এবং রতন বাসের ড্রাইভিং সিটে বসে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
পরে ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা বাসের চালক ও সুপারভাইজার, হেলপারসহ অন্যান্য সাধারণ যাত্রীদের হাত মুখ বেঁধে সিট কভার দিয়ে মুখ ঢেকে দেয় এবং যাত্রীদের সাথে থাকা নগদ অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে এবং শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটায়।
খন্দকার আল-মঈন বলেন, বিভিন্ন পেশার আড়ালে বাসে ডাকাতি করাই ছিল তাদের মূল কাজ। র্যাবের দাবি, মূল পরিকল্পনাকারী রতন ৪ বছর ধরে ডাকাতির সাথে জড়িত। গত এক মাসে চক্রটি আলিফ ও ঠিকানা পরিবহনেও ডাকাতি করে বলে জানান তিনি। মহাসড়কে এমন ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সব মহলকে সচেতন হবার আহ্বান জানিয়েছে র্যাব।
এর আগে বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের এ ঘটনায় টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে । আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে গ্রেপ্তার ৩ জনই ডাকাতির কথা স্বীকার করে। আর ধর্ষণের কথা স্বীকার করে রাজা মিয়া।