সিলেট শহরের পানি নামতে শুরু করলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। নতুন করে বেশ কিছু এলাকাসহ জেলার প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা এখনও পানির নিচে।
বন্যাদুর্গত বেশিরভাগ এলাকায় এখনো বিদ্যুৎ নেই। তবে, সিলেটের সাথে ঢাকার রেলযোগাযোগ চালু হয়েছে। এদিকে, বন্যাদুর্গত এলাকা ঘুরে ত্রাণ দিয়েছেন সেনাপ্রধান।
নৌকাই এখন একমাত্র বাহন বন্যায় বিপর্যস্ত নগর সিলেটের। শহরের প্রধান সড়কগুলোতে গাড়ি, রিক্সার বদলে যাত্রী পারাপার করছে নৌকা।
চারদিন ধরে যারা পানিবন্দি হয়ে আছেন তাদের ঘরে দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট। এমনকি আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতেও খাবার সংকটে ভুগছেন দুর্গত মানুষ।
নগরের বাইরে সদর, কোম্পানিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে নাজুক। পানিবন্দি কয়েক লাখ মানুষকে এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
তবে, সুনামগঞ্জে আটকে পড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ জন ছাত্রছাত্রীসহ শতাধিক পর্যটককে সেনাবাহিনীর সহায়তায় রোববার ছাতক হতে উদ্ধার করা হয়েছে।
সেনাপ্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমদ রোববার সিলেটের কোম্পানিগঞ্জে দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বন্যা দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্কে ত্রাণ বিতরণ শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, এমন একটা বিপর্যয়ের জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না। এটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।
তিনি আরও বলেন, এটা বহু বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এ বিপর্যয় এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে যেটা কাটিয়ে উঠতে আমরা সবাই সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা করছি।
তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এখানে এসেছি যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে তারা যে কষ্ট করে দুর্গম এলাকায় গিয়ে পানিবন্দি মানুষকে উদ্ধার করা, খাবার ও চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দিচ্ছেন তা দেখতে। এছাড়া তাদের আর কী সহযোগিতা আমি সেনাসদর থেকে করতে পারি, যাতে করে এই অপারেশন আরও সুন্দর ও সাফল্যমণ্ডিতভাবে করতে পারে।
জেনারেল এস এম সফিউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, শুধু সিলেট না, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, ঢাকা, সাভার থেকে ফোর্স ও অন্য সরঞ্জামাদি পাঠাচ্ছি; খাদ্য ও চিকিৎসা সাহায্য নিজেদের রিসোর্স থেকে দিচ্ছি।
তিনি আরও জানান, বর্তমান সময়ে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতার পাশাপাশি বন্যা শেষ হওয়ার পরও ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে কাজ করবে সেনাবাহিনী।
এদিকে, এক দিন বন্ধ থাকার পর রোববার বিকেল থেকে আবারও সিলেট স্টেশন থেকে রেল চলাচল শুরু হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আবারও রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে।
তবে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার সাথে যোগাযোগের মুল সড়ক ও রেললাইন পানিতে ডুবে গেছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মজিবর রহমান।
তিনি জানান, শনিবার বিকেল থেকে কোন যানবাহন জেলা থেকে বের হতে পারছে না। জেলার ৬০ শতাংশ এখন পানির নিচে। সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ।
টানা চারদিন বৃষ্টির পর রোববার ভোরের দিকে থেকে বৃষ্টি কমে এসেছে। এ কারণে শহর থেকেও পানি নামতে শুরু করেছে। তবে মহাবিপর্যয়েই রয়েছে নগরী ও জেলার মানুষ।
সিলেট সদরের দিকে নদীর পানি কিছুটা কমলেও উজানে পানির উচ্চতা বেড়েছে। এই পানি বিকেল নাগাদ ভাটিতে নেমে আসলে এদিকেও পানি বাড়বে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, আগামী সোম ও মঙ্গলবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল অবস্থা থেকে কিছুটা উন্নতির দিকে যাবে।
অন্যদিকে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, শনিবার রাত থেকে সুরমা ও পিয়াইন নদীর পানি কমলেও কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে। এর ফলে ফেঞ্চুগঞ্জ, বিয়ানিবাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে।