চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৯ ফায়ার সার্ভিস কর্মীসহ অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতে লাগা আগুন নেভাতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট। ধারণা করা হচ্ছে এই আগুন লেগেছে রাসায়নিকের কন্টেইনার বিস্ফোরণ থেকে। এর শব্দ শোনা গেছে চার কিলোমিটার দূর থেকেও, এতে ভেঙে পড়েছে আশপাশের ভবনের কাচ।
এ কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড নামে দাহ্য রাসায়নিক পর্দাথ থাকার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এতে ফায়ার সার্ভিস কর্মী, পুলিশসহ আহত হয়েছেন প্রায় তিন শতাধিক।
ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনায় দায়িত্বরতদের অবহেলা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় মনিটরিং টিমের অবহেলা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তাদের তিন দিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরো বলেন, তাদের প্রতিবেদন আসার পর আমরা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব, যাতে এনবিআর সদস্যরাও থাকবেন। আমরা যদি আজকের মধ্যেই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পেয়ে যাই তাহলে আমরা এনবিআরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব তদন্ত কমিটির বিষয়ে।
শনিবার রাত ১১টার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়ি–ঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।
আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের ২৯টি ইউনিট কাজ করছে। তবে কন্টেইনার ডিপোতে কোনো পানির উৎস না থাকায় আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক আনিসুর রহমান।
আগুনে বেশ হতাহতের আশঙ্কা করছে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। এরই মধ্যে আহত প্রায় ২০০ জনকে বিভিন্ন মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক নুরুল আলম আশেক বলেন, এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, রাতে আগুন লাগার খবর পায় তারা। এরপর তাদের আটটি ইউনিট কাজ শুরু করে। কিছু পরে সেখানে যোগ দেয় আরো ১২টি ইউনিট। বর্তমানে এ ভয়াবহ আগুন নেভাতে কাজ করছে ২৯টি ইউনিট।
রাত ১১টার দিকে ভাটিয়ারী এলাকার বিএম কন্টেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ শুরু হয়। এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কিছুক্ষণ পর পর কন্টেইনার বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
স্থানীয়রা জানান, বিস্ফোরণের বিকট শব্দে অনেক বাসাবাড়ির জানালার কাচ ভেঙে গেছে। মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। ভয়ে অনেকে মালামাল সরানোর চেষ্টা করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন স্টেশনের ২৯টি ইউনিট কাজ করছে।
গুরুতর আহতদের অ্যাম্বুলেন্সে করে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে। কন্টেইনার ডিপোর কর্মচারীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করছে। কর্মীরা জানিয়েছেন কন্টেইনারগুলোতে রাসায়নিক পদার্থ ছিল। হাইড্রোজেন পারক্সাইডের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যোগ দিয়েছেন সেনা বাহিনীর সদস্যরা
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আগুনের ভয়বহতার কারণে কন্টেইনার ডিপোর ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে না। কেমিক্যালের কারণে বিস্ফোরণ হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আর এ রাসায়নিকের ধোঁয়ায় বাতাস বিষাক্ত হওয়ায় উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে।
সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন বণিক বলেন, বিস্ফোরণে তাদের থানার কনস্টেবল তুহিনের এক পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আরো অন্তত পাঁচ কনস্টেবল, ফৌজদারহাট পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মোতাহার হোসেন এবং শিল্প পুলিশের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন। এ ছাড়া ফায়ার সার্ভিসের ৯ কর্মীর মৃত্যুসহ কয়েক সদস্য আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
ডিপো মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সীতাকুণ্ডে আগুনে ১৩শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।