আঠারো বছর পর ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে সিলেট মহানগরী। প্রতি বছর বিভিন্ন উপজেলা প্লাবিত হলেও এবারের চিত্র ভিন্ন। পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে নগরীর পাঁচটি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। তবে মহানগরীর পানি নিষ্কাশনে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন সত্বেও এমন পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নগরবাসী।
উজানের ঢলে প্রতিবছরই ফুলেফেঁপে উঠলেও, এবার সব সীমা ছাড়িয়ে বিপদজনক রূপে আবির্ভাব হয়েছে সুরমা নদীর। ঢলের পানি বাঁধ উপচে প্লাবিত হয়েছে নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। ২০০৪ সালের পর এমন বন্যা দেখেনি নগরবাসী।
মহানগরীর অবকাঠামো উন্নয়নে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প চলমান। এরমধ্যে শুধু ড্রেনেজ ব্যবস্থার জন্য খরচ ৫২৩ কোটি টাকা। এরপরও কেন এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি।
সিটি করপোরেশন বলছে, সুরমার পানি ধারণ ক্ষমতা না বাড়াতে পারলে বন্যা ঠেকানো সম্ভব নয়। এজন্য নদী খনন ও তীররক্ষা বাঁধের উন্নয়ন জরুরি।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, মানুষের ফেলা বর্জ্যেই মরে গেছে সুরমা। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে নগরবাসীকে।
এদিকে সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। বন্যায় ঘর-বাড়ি তলিয়ে থাকায় অনেকে ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। দুদিন ধরে বেশ কিছু উপজেলার বেশিরভাগ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সুনামগঞ্জে দুই শতাধিক স্কুল প্লাবিত হয়েছে। সাময়িক বন্ধ রয়েছে ২৮টি স্কুল। এদিকে, পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব রংপুর বস্তির বাসিন্দা রাশিদা বেগম। বন্যার পানিতে তলিয়েছে ঘর। পানিঘেরা কাঁচা ঘর কখন ভেঙে যায় এ শঙ্কায় ঘুম নেই রাশিদার। রয়েছে সাপের উপদ্রবও।
শুধু রাশিদাই নন এমন দুর্ভোগে রয়েছেন, এ উপজেলার অন্তত ৫০ হাজার বাসিন্দা। বেশিরভাগ পানিতে টিউবওয়েল তলিয়ে থাকায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। রয়েছে খাবার সংকট।
বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছাতক ও দোয়ারাবাজারে দুর্গতদের খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। এদিকে পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।
সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, শান্তিগঞ্জ উপজেলাসহ পাঁচটি উপজেলার ২১৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। স্কুলের মাঠ ও ক্লাসরুমের ভেতরে পানি ঢুকায় বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠদান।