কাজি আরিফ হাসানঃ
বিশ্ব জুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব যখন মহামারি আকার ধারন করে
তখন তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ে। আর এ মহামারি থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদে
রাখার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো বন্ধ রাখার ঘোষনা দেয় সরকার। এই করোনা
মহামারিতে এদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওপর প্রভাব পড়তে দেখা যায় বেশি।ইতোমধ্যে
এই করোনা সংক্রামন থেকে দেশের মানুষে মৃত্য হার কমাতে ও আক্রান্তের সংখ্যা রোধ
করতে বিভিন্ন(চিন,জাপান,জার্মান,আমেরিকার টিকা)দেশ থেকে এর প্রতিষেধক
ভ্যাক্সিনও সংগ্রহ করেছে আমাদের দেশের সরকার। ইতোমধ্যে প্রায় পৌনে ৩ কোটি ৩৭
লাখের মত মানুষকে করোনার টিকার আওতায় এনেছে। তবো বর্তমান চলমান করোনা সংক্রমনে
মৃত্যু হার কিছুটা কম ও আক্রান্তের সংখ্যাও কমে আসায় শিক্ষাঅধিদপ্তর শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর খুলেছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক।
গত ৫ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় পঞ্চম,এসএসসি ও এইচএসসি
শিক্ষার্থীর প্রতিদিনই ক্লাস করতে পারবে তবে অন্যান্য শ্রেনির শিক্ষার্থীরা
সপ্তাহে একদিন ক্লাস কবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃদীপু মনি। আবার
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা,প্রানবন্ত হয়ে উঠিছে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো।স্বাস্থ্য বিধি মেনে নতুন আঙ্গিকে স্কুল গুলো বরণ করে
নিলো শিক্ষার্থীদের। তবে শিক্ষামন্ত্রী ডাঃদিপু মনি জামালপুরে এক আলোচনায় বলেন
স্বাস্থ্য বিধি না মানলে এবং সংক্রামণ বেড়ে গেলে আবারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ
করা হতে পারে। রাজধানীর কয়েকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা যায়,
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সঙ্গে সঙ্গে কিছু সমস্যাও দেখা দিয়েছে,যেমন অনেক
শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন লকডাউনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিভিন্ন পেশা
জড়িয়ে পড়েছে যার কারনে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা থেকে ঝরে পরার প্রবনতাও লক্ষ্য
করা গেছে এদিকে ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে অনেকের
মতামতও পাওয়া যায়। দীর্ঘ বছর ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঝড়ে পড়া
শিক্ষার্থীদের বিষয়ে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত জানান তাদের মধ্যে সাবেক
শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড.আ ন ম এহছানুল হক মিলন গণমাধ্যমকে জানান,অতি জরুরী
ভাবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী আনন্দদায়ক শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে শিক্ষামুখি করতে
হবে,যেমনঃ টিফিনের ব্যবস্থা,খেলা-ধুলা,সাংস্কৃতিক প্রতিযোগীতা,মেয়ে
শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বাড়িয়ে দেওয়া এমন ধরনে কর্মসূচির মাধ্যমে। সৈয়দ
মনজুরুল ইসলাম(বাংলাদেশের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, কথাসাহিত্যিক ও সাহিত্যসমালোচক)
বলেন, ঝরে পরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষামুখি করতে হলে মেগা প্রকল্প হাতে নিতে হবে
সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে,যেমনঃ করোনা সংক্রমণে লকডাউনে দীর্ঘ সময় শিক্ষা
প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা অভাব-অনটন অনেকেই শিক্ষা ছেড়ে অন্য পেশায়ও যোগ দিয়েছে
তাদের কেও ফেরাতে হবে শিক্ষার দিকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার স্কুলের
ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দের সাথে স্কুলে আসতে দেখা যায়। আবার যে সব শিক্ষার্থীরা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসতে শুরু করেছে তাদের অভিভাবদের মধ্যেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে
পরিচালকদের প্রতি অসন্তোষ দেখা দিয়েছে যেমন স্কুল-কলেজ গুলো দীর্ঘ দেড় বছরের
বেশি বন্ধ থাকার দরুন শিক্ষার্থীদের বিগত বছরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুরো বকেয়া
বেতন ও আনুষাঙ্গিক সব পরিশোধ করতে হবে আর এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক দের
মনে বিরুপপ্রকৃয়া। কয়েক জন অভিভাবক তারা সাংবাদিকদের কাছে মতামত দেন আমাদের
সন্তানরা দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরের বেশি সময় ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আর এ বন্ধ
থাকার কারনে তারা স্কুলেও লেখাপড়া করেনি তা আমরা কেনো বিগত বছর থেকে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা পর্যন্ত বকেয়া বেতন দেবো কেনো? এ নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে
অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের সাথেও অনেকে বাকবিতণ্ড হতে দেখা যায়।এদিকে
বিশেষ করে প্রাইভেট কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়,তারা বলেন আমরা আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছি মহামারি করোনা
সংক্রাণে কারনে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আর এ বন্ধ থাকার কারনে আমাদের
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভাড়াকৃত ভবনেরও ভাড়া দিতে হচ্ছে ভবন মালিকদের তাহলে আমারপ
কেনো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বকেয়া বেতন নেবো না?এ ছাড়াও সাথে
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ অন্যদের বেতনও দিতে হবে তাই আমরা শিক্ষার্থীদের
কাছ থেকে বিগত বছর থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা পর্যন্ত বকেয়া বেতন
নিতে বাধ্য হচ্ছি, তারা আরও বলেন আমাদের সমস্যায় তো সরকারও কোন ভুমিকা রাখছেন
না তা আমরাই বা কি করবো? এ দিকে এমনও তথ্য পাওয়া যায় কোন অভিভাবক যদি তার
সন্তানকে পূর্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পড়াইতে না চান এবং অন্য স্কুল-কলেজে ভর্তি
করতে চান তখন সেখানেও লাগবে পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাড় পত্র আর এ ছাড়
পত্র পূর্বের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সংগ্রহ করতে হলেও বিগত বছর থেকে উক্ত
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ত্যাগ করা পর্যন্ত যত বকেয়া শিক্ষার্থীর কাছে প্রতিষ্ঠান
পাওনা তা পরিশোধের পর ঐ শিক্ষার্থীকে দেয়া হবে ছাড় পত্র। এদিকে স্বল্প আয়ের
অভিভাবকরা বলেন,আমরা কেন বিগত বছরের বকেয়া বেতন দিয়ে ছাড় পত্র নেবো,আমাদের
সন্তানেরা তো তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তো লেখােড়াই করেনি,তারা আরও বলেন এ দেড়
বছরে আমাদের সন্তানেরা অনলাইনে কি শিখেছে আপনারাই বলেন,আর আমাদের সন্তানেরা
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো অনলাইনে(জুম) ক্লাস করে
স্কুল খোলার পর স্কুলে যে এ্যাসায়েনমেন্ট জমা নিচ্ছে এবং শোনা যাচ্ছে কয়েক মাস
পর এসএসসি পরীক্ষা তা তারা কিভাবে পরীক্ষাদেবে?
টুয়েন্টিফোর বাংলাদেশ নিউজ/এসকে