জুময়ার দিন (শুক্রবার) অল্প আমল করেই অনেক সওয়াব এবং ফযিলতের অধিকারী হওয়া যায়। সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুময়ার দিন শ্রেষ্ঠতম। জুমার দিনের অনেক ফজিলত রয়েছে। জুমার নামাজ ফরজ হয় প্রথম হিজরিতে।
হাদিসে এসেছে- দিন সমূহের মধ্যে জুম’আর দিন শ্রেষ্ঠ এই দিনে আল্লাহ তাআলা আদম আলাইহিস সাল্লাম কে সৃষ্টি করেন এবং তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করান এবং জান্নাত থেকে বের করেন এবং এই দিনে অর্থাৎ জুম্মার দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে (মুসলিম শরীফ 854)
জুমার দিনের ফজিলত: আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ফরজ গোসলের মত গোসল করে প্রথম দিকে মসজিদে হাজির হয়, সে যেন একটি উট কুরবানি করল, দ্বিতীয় যে ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি গরু কুরবানি করল, তৃতীয় যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ছাগল কুরবানি করল। অতঃপর চতুর্থ যে ব্যক্তি মসজিদে গেল সে যেন একটি মুরগি কুরবানি করল। আর পঞ্চম যে ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করল সে যেন একটি ডিম কুরবানি করল। অতঃপর ইমাম যখন বেরিয়ে এসে মিম্বরে বসে গেলেন খুৎবার জন্য, তখন ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে খুৎবা শুনতে বসে যায়।’ (বুখারি: ৮৮১, ইফা ৮৩৭, আধুনিক ৮৩০)।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচ বেলা সালাত আদায়, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে হয়ে যাওয়া সব (সগিরা) গুনাহের কাফফারা স্বরূপ, এই শর্তে যে, বান্দা কবিরা গুনাহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবে।’ (মুসলিম; ২৩৩)।
জুময়ার নামাজে যাওয়ার প্রতি কদমে (পা ফেলায়)এক বছর নফল নামাজ ও এক বছর নফল রোজা রাখার সাওয়াব
হযরত আউদ ইবনে আউস ছাক্বাফী (রাঃ) বলেন আমি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে ব্যক্তি জুম’আর দিন-১. সুন্নত তরিকায় ভালোভাবে গোসল করবে। ২.সকাল সকাল মসজিদে আসার জন্য রওনা দিবে
৩.পায়ে হেঁটে যাবে ৪.ইমামের নিকট বসবে।৫.গুরুত্বসহকারে খুতব শুনবে।৬.অহেতুক কাজ ও কথা থেকে বেঁচে থাকবে।
তাহলে তার প্রতি কদমে এক বছর নফল রোজা রাখার এবং এক বছর নফল নামাজ পড়ার সাওয়াব তার আমলনামায় দেয়া হবে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি শুক্রবারে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য এমন নূর আলোকিত হবে যা সে জমা থেকে পরের জমা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হবে। অন্য রেওয়ায়েতে আছে সেই ব্যক্তি থেকে কাবা পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। (বাইহাকী ফী সুনানীল কুবরা ৩/৩৫৩)
আশি বছরের গুনাহ মাফ এবং আশি বছরের নেকী : অর্থ হযরত আবু হুরাইরা থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন যে ব্যক্তি জুমার দিন আসরের নামাজের পর আপন স্থান থেকে ওঠার পুর্বে এ দরুদ শরীফ আশি বার পাঠ করবে তার আশি বৎসরের পাপ মাফ করে দেয়া হবে আর আমলনামায় আশি বছরের নফল ইবাদতের নেকী লেখা হবে। (আসসাখাবী পৃ: ২৮৪)
দুরুদ শরীফ টি হলো
اَللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدَن النَّبِيِّ الأمِّيِّ وَعَلَى الِه وَسَلِّمْ تَسْلِيْمًا
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন জুমার দিন একটি মুহূর্ত আছে। যে সময় যেকোন মুসলমান আল্লাহ তাআলার নিকট যা কিছু প্রার্থনা করবে আল্লাহ তাআলা তাকে তা দান করবেন।কাজেই তোমরা আসরের পর দিনের শেষ মুহূর্তে সে সময়টা তালাশ করো। ( আবু দাউদ১/১৫০)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পরপর তিনটি জুমা বিনা ওজরে ও ইচ্ছা করে ছেড়ে দেবে, আল্লাহ তাআলা ওই ব্যক্তির অন্তরে মোহর মেরে দেবেন। (তিরমিযী,আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পর পর তিনটি জুমা পরিত্যাগ করবে, সে ইসলামকে পেছনের দিকে নিক্ষেপ করল। (মুসলিম)।
তবে আবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চার শ্রেণির লোক ব্যতীত জুমার নামাজ ত্যাগ করা কবিরা গোনাহ। চার শ্রেণির লোক হল- ক্রীতদাস, স্ত্রীলোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক বালক, মুসাফির ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তি। (আবু দাউদ)।